নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় এলাকায় বিএনপির একটি মতবিনিময় সভা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় এই সভা, যার পরিণতিতে গুলিবিদ্ধ হন দুইজনসহ আহত হয়েছেন অন্তত চারজন। তবে রবিবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চাঁচকৈড় শিক্ষা সংঘ পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কার্যক্রম সচল করতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা চলছিল। সভায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আজিজ স্থানীয় নেতাদের উদ্দীপ্ত করে বলেন, "দুর্দিনে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।" এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ জানান পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নাজমুল করিম। তার প্রতিবাদের জেরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে সভা মঞ্চের বাইরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
মূলত, আবদুল আজিজ ও জেলা বিএনপির আরেক সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামালের অনুসারীদের মধ্যে লম্বা সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে। সংঘর্ষের সময় শটগান থেকে গুলিবর্ষণ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এতে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুফি মো. আবু সাঈদ ও কর্মী আফতাব হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পক্ষ একে অপরকে ধাওয়া করছে, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান খান (বাবুল চৌধুরী) চেষ্টা করছেন।
জিল্লুর রহমান খান বলেন, “ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি দলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা জড়িত, তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।”
গুরুদাসপুর থানার ওসি আসমাউল হক জানান, সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। “দুটি শটগানের গুলি ছোড়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নেতা-কর্মীদের রক্তক্ষয়ী অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেও যদি কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ না করে, তাহলে এর পেছনে রাজনৈতিক সমঝোতা বা ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করছে কি না—সে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে গুলিবর্ষণের মতো ঘটনার পরও মামলা না হওয়া, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতাহীনতা এবং গোষ্ঠীগত প্রভাব প্রতিপত্তির একটা চিত্র তুলে ধরছে।